নিসিন্দা কি এবং তার ব্যবহার গুন
নিসিন্দা উদ্ভিদের বর্ণনা :
নিসিন্দা গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ । কাণ্ড শাখান্বিত , কাষ্ঠল ; পাতা পামেট সৌগিক , প্রতিমুখ - তির্যকাপন্ন , তিন ফলক বিশিষ্ট , নিচের জোড়াফলক অবৃত্তক , শীর্ষের একক লম্ব বৃত্তযুক্ত , ফলক লিনিয়িার - লেনসিওলেট , উপর পিঠ সবুজ , নিচের পিঠ সাদাটে, সুগন্ধযুক্ত , জালিকা শিরাবিন্যাস যুক্ত ; প্রধান মঞ্জরী রেসিম প্রকৃতির ; প্রতি পর্ব হতে প্রতিমুখ ভাবে দুইদিকে দুটি বাইপেরাস সাইম মঞ্জরী উৎপন্ন হয় ; পুষ্প অবৃত্তক, বেগুনী বর্ণের , বৃতি হালকা সবুজ , পাপড়ি ৫ টি , সংযুক্ত, পুংকেশর ৪ টি , পাপড়ি লগ্ন , গর্ভকেশর ২ টি , সংযুক্ত; ফল গোলাকার ।
নিসিন্দা সাধারণ গুণ :
নিসিন্দা কটু তিক্ত রস , কফ , বায়ু , ক্ষয়রোগ , কুষ্ঠ , বাত , শূলবেদনা , কাশ প্রভৃতি নাশক ; এটি জ্বর ও শ্লেষ্মা নিবরক , ক্রিমিনাশক ও বলকারক , মূত্রকর , ঋতুশুদ্ধিকারক , ফুলা বা টিউমার নাশক ।
নিসিন্দা ব্যবহার্য অংশ :
সাধারণত পাতা , কখনও মূল , ফুল ও ফল ।
নিসিন্দা কয়েকটি সহজ ব্যবহার :
আমাদের দেশে বাতের ব্যথায় এবং ফুলায় সচরাচর নিসিন্দা ব্যবহৃত হয় ।
নিসিন্দার পাতা পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর ব্যথা সেরে যায় ।
এতে করে আঘাতজনিত ব্যথাও উপশম হয় । পাতা গেঁটে বাতের দারুণ ফুলাও অতিদ্রুত আরাম করে দেয়।
এছাড়া শরীরের যে কোন স্থান ফুলে গেলে নিসিন্দার পাতা একটু গরম করে উক্ত স্থানে বেঁধে দিলে অত্যন্ত উপকার পাওয়া যায় ।
নিসিন্দার পাতা দিয়ে বালিশ ভরে তাতে শয়ন করলে মাথা ধরা , মাথা ভার প্রভৃতি আরাম হয় ।
পাতার ক্বাথে গোসল করলে মেয়েদের স্মৃতিকা রোগ নিরাময় হয় ।
গোলমরিচের সাথে নিসিন্দা পাতার ক্বাথ পান করলে সার্দিজ্বর ও মাথা ভার উপশম হয় ।
পাতার রস ক্ষত বা ঘায়ে দিলে ক্ষতের পোকা মরে যায় এবং পুঁজ বের হয়ে যায় , ফলে ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে যায় ।
পাতার রস ৮/১০ ফোঁটা মধুসহ পান করলে সর্দিজ্বর সেরে যায় ।
পেষণ করা পাতা ন্যাকড়ায় বেঁধে বার বার শুকলে পালাজ্বর সেরে যায় ।
শুকনা পাতার চুরুট ফুঁকলে মাথাধরা এবং সর্দিজ্বর সেরে যায় ।
নিসিন্দার পাতা বেটে অল্প ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া আরাম হয় ।
পাতার রস হেয়ারটনিক হিসেবেও কাজ করে ।
নিমের মত নিসিন্দার ডাল দিয়ে দাঁত মাজলেও বিভিন্ন প্রকার দত্ত রোগ সেরে যায় এবং দাঁত শক্ত ও মজবুত হয় ।
নিসিন্দার মূল , ফল ও পাতার রসে ঘি পাক করে খেলে ক্ষয় রোগ সেরে যায় ।
মূল বলকারক , ক্রিমিনাশক , মূত্রকর , কফনাশক ।
এটি শূল বেদনা , অক্ষুধা , বাত , চর্মরোগ , মূত্র থলির ব্যথা , আমাশয় এবং অর্শে ব্যবহৃত হয় ।
ফুল হার্ট টনিক , উদারাময় , কলেরা ,জ্বর ,পরিপাকতন্ত্রের রক্তস্রাব এবং লিভার দোষে ব্যবহার করা হয় । নিসিন্দার শুষ্ক ফল ক্রিমিনাশক ।
নিসিন্দা পাতার রসে তৈরি করা তেল মাথায় মাখলে খুসকি সেরে যায় এবং ছোটকালের নতুন টাকও ভাল হয়ে যায় ।
সিকি গ্রাম মাত্রায় নিসিন্দা পাতা গুঁড়ো খেলে কেঁচো ত্রিমির উপদ্রব কমে যায় ।
তিল তেলের সাথে নিসিন্দার রস গরম করে মালিশ করলে চুলকানি সেরে যায় ।
নিসিন্দা পাতার রসে গরম করা ঘি লাগালে মুখের ঘা ও অন্যান্য ক্ষত ভাল হয়ে যায় ।
নিসিন্দা পাতা গুঁড়ো ২ গ্রেন মাত্রায় ঠাণ্ডা পানি সহ বিকেলে সপ্তাহে ১ দিন খাওয়ালে ৮/১০ বছরের বাচ্চাদের শয্যায় প্রস্রাব করা বন্ধ হয়ে যায় ।
২/৩ রতি মাত্রায় নিসিন্দা পাতা গুঁড়ো ঠাণ্ডা পানিসহ বিকেলে মাকে দিন খেলে বৃদ্ধদের রাতে বার বার প্রস্রাব করার হয়রানি কমে যায় । শরীরে বাত ব্যথায় ও যন্ত্রণায় যারা প্রায়ই কষ্ট পান তারা এতে করে বেশ উপকার পাবেন।
নিসিন্দার পাতার ধুমে মশা সরে যায় বলে উল্লেখ আছে।
আধা সের পানিতে ৩/৪ গ্রাম নিসিন্দা পাতা সিদ্ধ করে ছেঁকে পানিটা খেলে গেঁটে বাত সেরে যায় ।
নিসিন্দা পাতার গুঁড়ো ভাতের সাথে খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।
নিসিন্দা পাতার সিদ্ধ পানি দিয়ে সেচন করলে যোনির ক্ষত সেরে যায় ।
-------------------------------------------------------------------
Note : আমরা উক্ত বিষয়টি শুধু মাত্র শিক্ষার জন্য। আপনার যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তার এর কাছে পরামর্শ নিন।
Tags:
Health